Gold In River: ভারত নদীমাতৃক দেশ আর তাই নদীর সঙ্গে এখানের সভ্যতার গাঢ় সম্পর্ক। পানীয় জল, বিদ্যুৎ উৎপাদন, কলকারখানা গড়ে ওঠা সবটাই নদীর উপর নির্ভরশীল। এককথায় সভ্যতা ও মানব জীবনের মূলে রয়েছে নদী। আর এই নদীকে ঘিরে কিন্তু রয়েছে প্রচুর গল্প, পৌরাণিক কাহিনী। তবে আজ যে নদীর কথা বলতে যাচ্ছি তার সঙ্গে পৌরাণিক কাহিনীর পরিবর্তে জড়িয়ে আছে বাস্তব রোমাঞ্চকর কাহিনী। বলা ভালো কাহিনী নয় সত্য ঘটনা। যে ঘটনা শুনলে অবাক হবেন আপনি।
“নদী আপন বেগে পাগলপারা”, এই নদীও বয়ে চলেছে আপন বেগেই। তবে সেই আপনবেগে চলতে চলতে সোনালি আভাও সাথে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। কি বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে! আসলে যে নদীর কথা বলা হচ্ছে তা রঙে সোনালী নয় আসলে এই নদী থেকে সোনা বের হয়। নদীর বুক জুড়ে বয়ে যায় সোনাও।
এই স্বর্ণরেখা নদীটি স্থানীয়দের আয়ের এক উৎস, তবে মাছ ধরে নয় এখানে উপার্জন হয় সোনা (Gold) তুলে। ভাবছেন তো কোথায় এই নদীটি রয়েছে? বেশি দূরে নয় কলকাতা থেকে কয়েকশো কিমি দূরেই কিন্তু রয়েছে এই নদী। বলা হচ্ছে ঝাড়খন্ডে অবস্থিত স্বর্ণরেখা নদীর কথা। ঝাড়খন্ড রাজ্য দিয়ে বয়ে গেছে এই নদী। জলের সঙ্গে নদীতে সোনা প্রবাহিত হওয়ার কারণে একে ‘স্বর্ণরেখা’ বলা হয়। বাংলায় এটি পরিচিত ‘সুবর্ণরেখা’ নদী নামে। কি চিনতে পেরেছেন তো এবার!
রাঁচি থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ৪৭৪ কিলোমিটার। কিন্তু প্রশ্ন হল যে এই নদীতে সোনা আসে কোথা থেকে? আসলে এই নদীর উৎপত্তি রাঁচির পিসকা গ্রাম থেকে। শোনা যায় এক সময় নাকি এই গ্রামে সোনার খনি ছিল। সেই খনি থেকে সোনা নদীতে মিশে যায়। আর সেই জন্যই এই নদীর নাম সুবর্ণরেখা।
দীর্ঘ দিন ধরে সুবর্ণরেখার স্রোতে সোনা বয়ে আসার রহস্য উদঘাটন করতে চেয়েছেন বিজ্ঞানীরাও। তবে সেখানেও কোন জুতসই উত্তর পাওয়া যায়নি। অপরদিকে ভূতাত্ত্বিকের মতে সোনা আছে এমন পাথরের উপর দিয়ে সুবর্ণরেখার জলে স্রোত প্রবাহিত হয়। জলের ঘর্ষণে কুচি কুচি হয়ে সোনা আসে জলে।
আরও পড়ুন: ATM কার্ড নেই তাতে কি? এইভাবে ATM থেকে টাকা তুলুন আধার কার্ড দিয়ে
আবার অনেকেই বলেছেন সোনার সন্ধান পাওয়া নতুন কিছু নয়। এলাকার আদিবাসী জনগোষ্ঠী ঝোরার গোষ্ঠীভুক্তরা অনেকদিন ধরেই স্থানীয় নদী থেকে সোনা কুড়িয়ে পাওয়ার কথা বলে আসছে। সেই কারণে এখানকার নাম দেওয়া হয়েছে সোনাঝুরি। শোনা যায় বর্ষার পর সুবর্ণরেখায় জল কমে গেলে তীরে নাকি সোনার টুকরো পড়ে থাকে। আজও দেখা যায় স্থানীয় মানুষেরা বালি থেকে সোনা খুজছেন।
তবে এই সোনা সংগ্রহ করতে কিন্তু কঠোর পরিশ্রম করতে হয়।। সর্বোচ্চ ৭০ থেকে ৮০ টি সোনা অনেক কষ্ট করে সংগ্রহ করে অধিবাসীরা। তারপর সেই সোনা বিক্রি হয় ৮০-১০০ টাকা দরে। সেই সোনা পরিশোধন করে ওই অঞ্চলের বাসিন্দারা মাসে ৭-৮ হাজার টাকা রোজগার করেন।